সারা বিশ্বের সাথেসাথে বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস রোগটি ধীরে ধীরে মহামারি আকার ধারন করছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ লক্ষ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। ধারনা করা হচ্ছে যে, আরো ৮৫ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, কিন্তু তারা জানেই না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। কারন তারা এখনো ডায়াবেটিস পরীক্ষা করেনি। ডায়াবেটিস একবার হলে আর কখনো ভালো হয়না কিন্তু ভালো রাখা যায় , এটা সারাজীবনের অসুখ। তবে আমার মতে ডায়াবেটিস আহামরি কোনো খারাপ অসুখ নয়, তাই একে ভয় না পেয়ে ভলোবেসে নিয়ণ্ত্রনে রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। শুনে হয়তো আপনি অবাক হচ্ছেন যে, কেনো আমি ডায়াবেটিসকে খারাপ অসুখ বলছিনা!!! একটু সহজ করে দিই, আপনি আপনার আশেপাশে খেয়াল করুন, অনেক ডয়াবেটিক ব্যক্তি দেখতে পাবেন, যারা ৫বছর, ১০বছর, ২০বছর বা ৪০বছর যাবৎ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত। তারপরও তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। জীবনের প্রতিটি কাজ তারা একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরমতই করে যাচ্ছেন। যিনি চাকুরী করেন তিনি চাকুরী করছেন, যিনি ব্যবসা করেন তিনি ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, যিনি পড়ালেখা করেন তিনি সেটাও খুব সুন্দরভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থ্যাৎ ডায়াবেটিসের কোন প্রভাব আপনার জীবনের স্বাভাবিক কর্মকান্ড কে থামিয়ে দিতে পারেনা। পৃথিবীতে আর ২য় কোনো রোগ নেই যেটা হলে মানুষ ৩০-৪০ বছর বা তারও অধিক সময় বেঁচে থাকতে পারে, এটা শুধু ডায়াবেটিসেই সম্ভব। আমরা সেই রোগকে খারাপ বলে থাকি যে রোগের মৃত্যুঝুকি বেশি থাকে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগে মৃত্যুঝুকি নেই বললেই চলে। তাই আমি মনে করি যে ডায়াবেটিস আসলেই কোনো খারাপ অসুখ নয়। তবে অনিয়ণ্ত্রিত ডায়াবেটিস এ কিছু জটিলতা থাকে, যা ডায়াবেটিস নিয়ণ্ত্রনের মাধ্যমে সহজেই জটিলতাগুলো এড়িয়ে চলা যায়। আর ডায়াবেটিস নিয়ণ্ত্রনের জন্য শৃঙ্খল জীবনযাপন খুবই জরুরী। ডায়াবেটিস নিয়ণ্ত্রনের জন্য ৩টি D যুক্ত শব্দ মেনে চলতে হবে -
১) Diet
২)Discipline
৩)Drug
খাবর ব্যবস্থাপনা মেনে চলতে হবে, শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে এবং ঔষধ ব্যবস্থাপনা মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচে্ছ খাবর ব্যবস্থাপনা। সুষম খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যেসব খাবারের গ্লাইসিমিক ইনডেক্স কম সেই সকল খাবার খাদ্যতালিকায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। মিষ্টি জাতীয় খাবার বন্ধ করতে হবে, শর্করা জাতীয় খাবার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী মেপে খেতে হবে, জটিল শর্করা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে, (যেমন লাল আটা, লাল চাল) ফ্যাট, প্রোটিন পরিমানমত খেতে হবে। শাক-সবজি, শসা-খিরা, টকজাতীয় ফল বেশি খেতে হবে। সারাদিনে যথেষ্ট পরিমান পানি পান করতে হবে । দিনে অবশ্যই একবার পরিমাণমত দুধ পান করা উচিৎ এবং প্রত্যেকদিন একবেলা ৪০-৫০ মিনিট হাটার অভ্যাস করুন। শুধু খাদ্য তালিকা মেনেই কিন্তু ডায়াবেটিস ভাল রাখা যায়, কিন্তু শুধু ঔষধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস ভাল রাখা সম্ভব নয়। তাই ডায়াবেটিস এর প্রথম এবং প্রধান চিকিৎসায় হচ্ছে খাবার ব্যাবস্থাপনা মেনে চলা। সবচেয়ে ভলোহয় একজন পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে আপনার সারাদিনের খাদ্যতালিকা ঠিক করে নেওয়া। সুস্থ থাকুন ভাল থাকুন।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/Nutritionist.Iqbalr
লেখক
পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন
বিএসসি (সম্মান), এমএসসি (প্রথম শ্রেণী)
(ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি)
পুষ্টি কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
জাকির হোসেন রোড, খুলশি।
চট্টগ্রাম।
চেম্বারঃ সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ইউনিট-২,
কাতালগঞ্জ, চট্টগ্রাম।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৫ঃ৩০-৮ঃ০০ টা
চেম্বারঃ হাটহাজারী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার,
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
প্রতি বুধবার বিকাল ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত।
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Nutritionist.Iqbal